কাগজের প্লেন
অর্পণ
আমার ফিরে আসার গল্পটা একটু অন্যরকম। একটা সাহসের গল্প লিখব বলে সেই কখন
বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। মিন্টুদার ছোট ছেলেটা তখন ওয়াটার বট্ল্ দোলাতে দোলাতে স্কুলে
যাচ্ছে। পিছনে মর্নিং ওয়াক।
তারপর আমাকে পাওয়া গেল দুটো পঁয়তাল্লিশের কল্যাণী সীমান্তের তলায়। আমার
বাঁ পকেটে কিছু খুচরো পয়সা, খুব যত্ন করে ভাঁজ করা রুমাল আর একটা চিঠি। ডান পকেটে একটা
কাগজের প্লেন।
ভিড়, কৌতূহল আর তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের থ্রু গাড়ি পেরিয়ে একজন আমাকে চিনতে
পেরেছিল। সৈকত। বাঁ কাঁধের তিলটা দেখেই হয়ত। তারপর দু-চারটে ফোন, নার্স, ওষুধের গন্ধ,
ডেথ সার্টিফিকেট। কেষ্টদার চায়ের দোকান কানা করে দিয়ে ময়নাতদন্ত।
বাড়িটা এখন থমথমে। মা কাঁদেনি, দিদি স্বাভাবিক। বংকুদা অকালমৃত্যুর শেষকৃত্য
নিয়ে গুরুগম্ভীর। পাশের বাড়ির জেঠু একটু রেখেঢেকে শোক করছেন – আজকালকার ছেলেদের বৌদি
বোঝাই দায়। দেখুন কোনো মেয়ে-টেয়ে হয়ত...
কিন্তু তাকে নিরাশ করেছিল পুলিশ। চিঠিটা মেয়ে টাইপ নয়। আমার কোনো শত্রু
ছিলনা, সুইসাইড নোট ছিলনা, ঝগড়া ছিলনা। হঠাৎ কিছু করে বসবার মতো ইমোশনাল নই। লোকে তাই
বলে। আমার নেই-এর তালিকাটা এত লম্বা যে তিন সপ্তাহ পর সবাই আমাকে ভুলে গেল।
চিঠিটা লিখেছিলাম খেয়ালে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল বলে। কালো গুটিগুলো দাবায় বারবার
জিতে যাচ্ছে দেখে। বাড়ি ফেরার সময় রোজ গা গুলিয়ে উঠত, তাই সেদিন রিটার্ন টিকিট কাটিনি।
আমার লাইনে পা পিছলে পড়ে যাবার এবং ইন্সপেক্টর বসাকের কাগজের প্লেনটা দলা
পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবার মধ্যে পুরো এক ঘণ্টার ফারাক। তারপর সব ঠাণ্ডা।
ওরা কেউ জানতে চায়নি গল্পটা আমি শেষ করেছিলাম কিনা। পুলিশ আমার ঘরদোর ঘেঁটেছিল।
কেউকেটারাও। গল্পটা পায়নি।
আসলে আমার পকেটে দুটো কাগজের প্লেন ছিল। গল্পটা এখন উড়ছে। অনেকগুলো ঘুম
পেরিয়ে আসতে হবে বলে একটু দেরি হচ্ছে। মিন্টুদার ছোট ছেলেটা ঠিক পৌনে তিনটের সময় বারান্দায়
খেলনা নিয়ে বসে। বন্দুক, গাড়ি, হি-ম্যান... তাসগুলো অদ্ভুত ভাবে সাজিয়ে হ্যাপি-হোম।
ওই বাড়িটা ভেঙে তছনছ করে দেবে বলে প্লেনটা আসছে। একদিন হয়ত ও গল্পটা খুঁজতে বেরোবে।
বললাম না, আমার ফিরে আসার গল্পটা একটু অন্যরকম!
লেখকের
সম্পর্কে জানতে এই পাতায় আসুন
এটা ছোটোগল্প, না অনুগল্প? সে যাই হোক, অনেক দিন বাদে অন্য স্বাদের গল্প পড়লাম।
ReplyDeleteসে না হয় বুঝলাম তবে তোমার কি হলো? অণু পরমাণু কিছুই তো পেলাম না ... :(
Deleteআমার লেখাটা অ্যাটম বোমা হয়ে গেছে। অলরেডি ২৩ পাতা হয়ে গেছে, কি করে ম্যানেজ করব/করবি ভগাই জানে। এ জিনিস ছাড়লে ঢি ঢি পড়ে যাবে, কিন্তু তাও ছাড়বো। রাজা আমায় অনেকগুলো ডেডলাইন দিয়েছে, তার মধ্যে শেষটা হল ৫। সেদিনই।
ReplyDeleteBah! Sundor.. Bhalo laglo.. :)
ReplyDelete