না-জানা গল্প

সঞ্চারী


মেঘলা... না দিন বা মনের কথা বলছি না - বলছি একটি মেয়ের নাম। আপনি তাকে চেনেন বোধহয়। ওই যে রোজ রোজ অফিস যাওয়ার পথে গাদাগাদি ভিড়ে যে মেয়েটাকে ট্রেনের জেনারেল কম্পার্টমেন্ট থেকে নেমে যেতে দেখেন, যাকে দেখে আপনারই কয়েকজন সহযাত্রী প্রতিদিনই চোখ টিপে মন্তব্য করেন, “শালা মালটা রোজ ছেলেদের ঠেলা খেতেই তো জেন্টস্‌ -এ ওঠে”, আর আপনি যথাসম্ভব দাঁতে দাঁত চিপে মনে মনে বলেন এটা জেন্টস্‌ নয়, জেনারেল, এবং তবুও রোজই একটু বিস্ময় নিয়ে মেয়েটাকে দেখেন - মনে করুন এটাই তার নাম। জানি নামটা আপনার জানা হয়ে ওঠেনি কোনোদিনই...

সেদিন হঠাৎই কি একটা কাজে আপনাকে নামতে হলো ওই স্টেশনে - হ্যাঁ, যে স্টেশনে মেঘলা নেমে যায়। যথারীতি গাদাগাদি ভিড়ে নামতে হলো আপনাকে – সজ্ঞানে না অজ্ঞানে জানিনা—আপনি ছিলেন মেঘলার ঠিক পরেই। এবং যা না হলেই ভালো হত হয়ত, ঠিক সেটাই হলো। ভিড়ের টাল সামলাতে না পেরে আপনি পড়লেন ওর ঘাড়ে হুমড়ি খেয়ে। তারপরের ঘটনা আমি জানিনা...

জানি না বটে, তবে অনুমান করতে পারি। খানিক ধাতস্থ হয়ে আপনি যারপরনাই লজ্জিত মুখে ওকে ‘সরি’ বললেন - সেও ফরম্যালি ‘ইট্‌স্‌ ওকে’ বলল। হ্যাঁ, ও খুব একটা রাগ করেনি। আপনার মুখ দেখলে বেশ বোঝা যায় আপনি ভদ্রলোক, আর মেয়েরা এটা বেশ ভালোই বোঝে...

পরের দিন একই ট্রেনে আবার দেখা। আপনি একটু কাঁচুমাচু মুখেই তাকালেন। ও কিন্তু স্মার্টলি হাসলো, জিজ্ঞেস করলো আপনি কিসে আছেন? অফিস কোথায়? আপনিও হেসে উত্তর দিয়ে প্রতিপ্রশ্ন করলেন। উত্তরটা হয়ত আপনি শুনেছিলেন কিন্তু বুকের ধুকপুকুনির আওয়াজটা বেশি ছিল তো, মনে রাখতে পারেননি। এরপর থেকে রোজই আপনাদের দেখা হয়। আর হ্যাঁ, একটু একটু কথাও হয়...

তারপর হঠাৎ কিছুদিন ওকে দেখতে পেলেন না। পুজোর কদিন অফিসে ছুটি নিয়েছিলেন আপনি। একাদশীর দিন ট্রেনে - মনটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল... মা দুগ্‌গা চলে গেলে বুঝি এত দুঃখ হয়!!

পরপর ক'দিন ওকে দেখতে না পেয়ে আপনি বুঝলেন ব্যথাটা ঠিক কোথায় - এবং তড়িৎবেগে মনে পড়ল ও বোধহয় বলেছিল স্কুলে চাকরি করে...

ভেবে দেখুন একবার! এই যন্ত্রনির্ভর যুগে এরকম ঘটনা! স্রেফ নাম অথবা ফোন নাম্বার জানলেই তো গোল মিটে যেত! ফোনে বা ফেসবুকে কন্ট্যাক্ট করা কোনো ব্যাপার!

তারপর পুজোর ছুটির পর মেঘলা এল - ক'দিন উশখুশ করে আপনি ওকে প্রেম নিবেদন করলেন, ও-ও রাজি - তারপর শুভদিনে শুভক্ষণে জোড় বাঁধলেন আপনারা...

এমনটা হলে ভালোই হত। তবে কি জানেন, এটা পুরোটাই আমার অনুমান মাত্র... যদি আপনি সেদিন হুমড়ি না খেতেন! কিংবা নেমে ও এমনি গালাগাল দিত যে আপনাকে কম্পার্টমেন্ট চেঞ্জ করতে হত! পুজোর ছুটির পর ও যদি আর না যেত ওই ট্রেনে!! উত্তরগুলো জানা থাকলে আমায় জানাবেন প্লিজ...



*******
লেখকের সম্পর্কে জানতে এই পাতায় আসুন

1 comments:

  1. ছোট্ট আর সুন্দর...... খুব ভালো লাগল। 'কথা'-র সম্পাদকদের ধন্যবাদ এই special edition-এর জন্য।

    ReplyDelete